আজ ভোরের আলোটা যেন অন্যেরকম মনে হচ্ছে । যেন কেউ এসে তার উপর আবীর বুলিয়ে রেখে দিয়েছে ।
মনের মাঝে কিছু স্বপ্ন আছে যা প্রতি মুর্হূতে বদলাচ্ছে নতুন সাজে । নতুন কোথাও যেতে হবে এই ভাবনায় রাতের
নিদ্রা হয়েছে সংকীর্ণ । চঞ্চল মন উদ্ভ্রান্তের ন্যায় এদিক সেদিক উঁকি দেয় আর সেটা পরিণত হয় বাস্তবায়নের মাঝে । বহ্নির মনে ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল
university যাওয়ার পূর্ব মুর্হূত পর্যন্ত । সে এক নতুন জীবন যাকে কখনো
বেঁধে রাখা যায় না । শুধু মাত্র কল্পনার রঙে আঁকা যায় ।
নতুন পরিবেশ, নতুন সব মানুষ গুলি এসব ভাবতে ভাবতে বহ্নির ঘুম আসে না। বহ্নি ভাবে কেমন হবে নতুন জীবন, নতুন সব কিছু? এই সময় দিদি আসে,
বহ্নিকে প্রস্তুত হতে বলে । বহ্নি সাড়া দেয় দিদির কথায় ।
বহ্নিরা চার বোন কোন ভাই নাই । বড় দিদির বিয়ে হয়েছে বছর খানেক । আর মেঝ দিদি Masters পড়ছে ঢাকার একটা বিশেষ কলেজে । বহ্নি বোনের
মধ্যে তৃতীয় । বহ্নির ছোট বোন বেলা । বাবা Retired করেছেন । মা স্কুল শিক্ষক । বলা চলে সাজানো গোছানো একটা পরিপাটি পরিবার । বহ্নি পরিবারের একমাত্র মুখ যে সারাদিন পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষকে নিয়ে
মজায় মেতে থাকে । তাই সবাই মন খারাপ করে আছে বহ্নির বাইরে
পড়তে যাওয়ার কারণে । তবুও তাকে যেতে হবে । সামনে তার নতুন
ভবিষ্যতের হাতছানি ।
বহ্নি কোথায় থাকবে, কে তাকে সাহায্য করবে university যাওয়ার ব্যাপারে
এই সব ভাবনা আগেই ঠিক হয়ে আছে ।
বহ্নি সবার সাথে একে একে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো ।
তার নতুন জীবনের হাতছানির দিকে ।
বহ্নি তার মেঝ দিদির সাথে উঠলো । মেঝ দিদি মামাতো বোনের বাসায় থাকে। সেখানে তার সুযোগ-সুবিধার সু-বন্দোবস্ত ছিল ।
দিদির বাসায় আসার পর তার কী যে আনন্দ সে কাউকে বোঝাতে পারবে না। সে ক্লাসের প্রথম দিন কি করবে, কিভাবে কথা বলবে, সব কিছু আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি, মনের ভেতর তার শঙ্কা কাজ করছে নতুন শিক্ষক, নতুন বন্ধু-বান্ধবী, সবকিছু নিয়ে সে বেশ অন্যরকম অনুভূতি সঞ্চার করে চলেছে।
পরের দিন সে যাবার সময় দিদির ছোট দেবরকে সাথে নিয়ে গেল তার ক্যাম্পাসে। কলা ভবন কোথায়, তার ক্লাস কোন দিকে হবে এইসব প্রশ্নে সে তার দিদির দেবরকে জর্জরিত করে চলেছে।
বহ্নির ক্লাসের সামনে নামিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন। বহ্নি তার নতুন ক্লাসে সবার সাথে খুব ভালো সর্ম্পক তৈরী করে ফেললো এবং সে ফজিলাতুন্নেসা হলে সিট পেয়ে গেল। বাসা ছাড়তে তার বেশ কষ্টই হচ্ছিল, তবুও হলে যাওয়ার পর তার বেশ ভালো লাগলো। ঢাকা ইউনির্ভাসিটির মত জায়গায় তার স্থান হয়েছে।
এখন তার প্রত্যেকটি মুর্হূত কাটে রঙিন জগত এবং সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নে।
বহ্নির প্রথম স্বপ্ন দেখা, ভালো লাগা, ভালোবাসা, প্রেম জেগে ওঠে তার ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেওয়া সেই যুবকের উপর। কিছুদিন ধরে ও যন্ত্রণায় ছটফট করছে কিভাবে বলবে? বলি বলি করে হঠাৎ একদিন বলেই ফেলে। বলার পর ওর নিজেকে হাল্কা লাগে কারণ সেই যুবকটি তাকেও পছন্দ করে। বহ্নির পৃথিবীটা যেন অন্যরকম রঙে অঙ্কিত হলো।ওর জীবনে কখনো নেতিবাচক কিছু ঘটেনি ।
সব কিছু ভালোভাবে যেতে লাগলো । কিছু বছর যাবার পর অর্থাৎ বহ্নির পড়ালেখা শেষের দিকে ঠিক তখনই হলো বিপত্তি তার পছন্দের মানুষকে কখনো আর সময় মত ফোন করে পায় না, আর যদিও দেখা করে তবে যথা সময়ে নয়। এভাবে বহ্নি আর সহ্য করতে পারে না। তারপরও স্বপ্ন দেখে এই মানুষটাকে নিয়ে সে সারাজীবন কাটাবে, তাই ছাড় দিয়ে চলে......................................................................................
........................................................................................................................................................................................................................
বহ্নির পরীক্ষা শেষ, ও ঠিক করে বাসায় বিয়ের কথা বলবে ওর পছন্দের মানুষটাকে নিয়ে। ও জানে ওর ব্যাপারে কেউ না বলবে না। তাই ঠিক করে দিদিকে আগেই জানাবে। ওর মেঝদিদি পড়ালেখা শেষ করে একটা কোম্পানীতে বেশ কয়েক বছর জয়েন্ট করেছে।
বহ্নি মেজ দির সাথে বাসায় দেখা করতে গেল । দিদির ছুটির দিন ছিল। ঐদিন বাসায় মামাতো বোন, তার স্বামী, মেজ দি ও তার মামাতো বোনের দেবর মানে যাকে তার পছন্দ সবাই ছিল। ও বেশ লাজুক ছিল। তারপর দিধা না করে দিদিকে আলাদা রুমে নিয়ে ওর সব কথা জানায়। ওর দিদি সব কিছু শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায়। দিদি বহ্নিকে নিষেধ করে এটা সম্ভব নয়, তুই ওকে ভুলে যা। আর এখানে তোদের ব্যাপারে কেউ রাজী হবে না।
বহ্নি হলে চলে আসে, ও সিদ্ধান্ত নেয় ওর বাবা-মাকে জানাবে। দিদি ওকে ফোন করে প্রতিশ্রুতি দেয় আচ্ছা আমি বাড়ীতে কথা বলবো তোর টেনশনের দরকার নাই, এই বলে ফোন কেটে দেয়।
মেজ দিদি সারারাত ঘুমায় নাই । সারা রাতে তার পৃথিবী কে আরও আঁধারের গভীরের অতল সাগরে নিয়ে যেতে লাগলো তার পিছনের দিনগুলো, এক মুর্হূতে ভেঙে সব বিশ্বাস চূর্ণ-বির্চূণ হয়ে গেল।তার জীবনের সমস্ত ভালোবাসা যাকে ঘিরে সে তার সাথে কেন এমন খেলা খেলে গেল। ণখমা ছিল তার ভালোবাসার একমাত্র পুরুষ যাকে সে সব কিছু দিয়ে দিয়েছে। মামাতো বোনের বাসায় এসে বোনের দেবর ণখমাকে দেখে ভালোবেসে ফেলে, একসময় একই ছাদের নিচে থাকতে থাকতে মন দেওয়া ভালো ভাবে চলে। দুজনই পরস্পরের চাওয়া-পাওয়া মেটাতে থাকে। কারণ, বাসায় দিদি আর দাদাবাবু দুজনই চাকরিতে চলে যেত, বাড়ী থাকতো ফাঁকা। এ জন্য সম্পর্কটা সুনিবিড় ভাবে গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে সে ঠিক করে পরিবারে বিষয়টা জানিয়ে সে বিয়ের পিড়িতে বসবে। এভাবেই সব কিছু ঠিক ছিল, ণখমা সেভাবেই তাকে বলেছিল। কিন্তু আজ সে কি শুনলো তার ছোট বোনের কাছে, যা তার কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। .....................................................
.......................................................................................................................................................................................................................।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন