আজ আকাশটা ছিল ঝকঝকে, শরতের আকাশ বলে কথা, রুপ যেন তার চারিদিকে ছড়াচ্ছে। সে রুপের বর্ণনা নাইবা দিলাম। আমি অনেকদিন পর ছদে উঠেছিলাম কি এক সৌন্দর্য আমাকে ঘিরে রাখলো, ঐ মুর্হূতে আমি টাইম মেশিন এর মত বছর তিনেক আগে চলে গেলাম.......................................................
আমরা সব বন্ধু-বান্ধবী মিলে এমনই শরতের আকাশের নিচে ছাদের উপরে এক বান্ধবীর জন্মদিনের আয়োজন করেছিলাম। আমার বান্ধবী আমার থেকে বছর দুয়েকের বড় তবু ফ্রেন্ড কারণ ছোট বেলায় ওর কোন খেলার সাথী ছিল না তাই আমাদের গ্রুপে খেলতে আসতো। ছোট বেলায় আমরা অনেক ধরনের খেলায় খেলেছি এই যেমন গোল্লাছুট, গাদিখেলা, কানামাছি, বউচি, ডাংগুলি আরো কি খেলেছি মনে নাই। দুপুরে কিংবা বৃষ্টির দিনে আমরা সবাই মিলে পুকুরে ও দীঘিতে গোসল ও সাঁতার কাটতাম। পুকুরে গিয়েও খেলতাম, অনেক ক্ষণ ধরে যতক্ষণ না মা-বাবা আসতো। এরপর আমরা একসাথে সাইকেল চালাতাম, কে র্ফাস্ট হবে তাই খুব জোরে জোর সাইকেল চালাতাম। আমি প্রথম দিকে র্ফাস্ট হলেও পরে আর ওদের সাথে পারতাম না। তাই ঠিক করলাম আরো বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে। আমার সামনের বাসার বান্ধবীকে(বর্তমানে এই বান্ধবী লন্ডনে থাকে) নিয়ে খুব ভোরে সাইকেল নিয়ে বের হলাম। বের হওয়ার পর দেখি আমার সাইকেলের রিং বেল নাই তখন মনে হলো আমার ছোট ভাইটার কাজ। পরে আমার বান্ধবীকে বললাম শোন আমার সাইকেলের বেল নাই তাই তুই আগে থাকবি আর আমি তোর পিছনে থাকবো, ও তখনই বলছে আমি তোর মত ভালো পারি না, আমি ওকে উৎসাহ দিলাম সমস্যা নাই আমি আছি। ও থামে না। পরে বললাম রাস্তায় অনেকে হাঁটাহাটি করবে তাই তুই আগে থাকবি। যাই হোক শুরু করলাম চালানো।
আমাদের বাসার সামনের রাস্তা ক্রস করে চৌরাস্তার মোড়ে পৌছাঁলাম আর সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে আমার মনটাই ভালো হয়ে গেল তখন ভাবলাম আর বিকালে ওদের সাথে সাইকেল চালাবো না, এতো সুন্দর আবহাওয়া যা সাইকেলেই পাওয়া যাবে এবং সেটা সকালে কিন্তু বিকালেরটা আলাদা। এই ভাবতে ভাবতে সামনে দেখি সব আংকেল আন্টির দল। আমি ওকে সাবধান করে দিলাম বেল দেওয়া শুরু কর নইলে চাকায় পড়বে। ও বেল দেয় কিন্তু তারা গল্পে মগ্ন, ও তখন ডান বাম এক করে ফেলেছে, কোনদিকে মোড় নিবে বুঝতে পারছে না। আমি বললাম ব্রেক চেপে স্লো যা, আর আন্টিদের এক সাইড দিয়ে যেতে বল। এই কথা বলার মাঝেই ও এক আন্টির পিঠে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে। আন্টিটা দেখতো বেশ মোটা এবং লম্বাও বটে। আমি ওকে বললাম সাইকেল তোল আমি দেখছি।আমার সাইকেল একদিকে রেখে আন্টিকে তুলতে গিয়েছি তার আগেই আন্টি উঠে পড়েছে, যদিও আমার পক্ষে তাকে তোলা সম্ভব ছিল না, তবুও চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আন্টি উপুড় হয়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছিলেন, আমি তাকে যতই সরি বলি না কেন তবু সে কোন কথা শুনতে চাই না, একভাবে বকা দিচ্ছে, এবং বলছে আজকালকার ছেলেপেলেদের কি হয়েছে গুরুজনদের মানে না এরা যে কালে কালে কি করবে ইত্যাদি ইত্যাদি..........................................................................................
আমি আমার বান্ধবীকে বললাম আন্টিকে বল ভুল হইছে এমনটা আর হবে না আন্টি কিছু মনে রেখেন না এগুলো তাকে বল নইলে তিনি থামিবেন না। ও তাই করলো । এরপর সাইকেল নিয়ে দুজনেই উধাও আর ঠিক করলাম সকালে আর আসবো না। সবাইকে যেন এটা না বলা হয় সেটা বান্ধবীকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।
আমি ছাদের চারিদিকে পায়চারি করছি আর ছোটবেলা এবং বড় হওয়ার পরের কথা গুলো মনে হতেই আপন মনে হেসে চলেছি আর পাশেই বাচ্চাদের কোলাহলে মনে হলো আমরা জন্মদিনের কেক নিয়ে কি সব কান্ড করে চলেছি, আমার বান্ধবী ঐ দিন তিনটি কেক পেয়েছিল যা আমার জন্মদিনেও এমনটাই পেয়েছিলাম। রাত ১২টা ১মিনিটে কেক কেটেছে, সন্ধ্যা ৭টার সময় কেটেছে, আর বিকাল ৪টা.৪০মিনিটে কেটেছে....................................................................
আমরা বিকালের কেকটাকে ইচ্ছামত সবাই ছুঁড়েমেরেছি প্রত্যেকের গায়ে, এর পর সবাই নাচানাচি করেছি তারপর ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করেছি......................................................... এরপর তিনটা বছর পার হয়ে গিয়েছে, এখন প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্থানে নিজের রাজত্ব চালাচ্ছে। আর মনে হলো আজ লিখবো আমাদের টাইম মেশিনের কথা !!!
এই লিখা লিখতে গিয়ে আমি অনেক ক্ষণ ধরে হাসছিলাম আর আমার ছোট বোনের একটা টুকটুকি মেয়ে আছে সে এসে বলে আমি কেন একা হাসি ল্যাপটপের সামনে বসে। ছোট মানুষটার মাঝে প্রশ্ন আসতেই সে আমাকে বলে-- তুমি এমন হাসো কেন ? কি হয়েছে তোমার? আমি ওর উত্তরে বলি হু আর ও বিরক্ত হয়ে রুম ছেড়ে চলে যায় আর আমার মা-বাবাকে বলে, আমার কথা তারা শুনে বলে- ও কোন বন্ধুর সাথে চ্যাট করছে তাই হাসছে। আমি এগুলো শুনে আরো হাসি...............অনেক দিন পর খুব জোরে জোরে হাসছি....................
জানিনা টাইম মেশিন আমাকে আবার কবে এভাবে হাসতে শেখাবো।
এখন জীবনটা কেমন যেন হয়ে গিয়েছে যা আর আগের মত করে ফিরে পাই না ছন্দ, তাল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন