আজ বাবাকে নিয়েই যত কথা। আমি অনার্স ১ম বছরে পদারপন করেছি। ঢাকাতে আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে। তারপরও আমি হোস্টেলে থাকি। সবাই সেটা নিয়েও অনেক কথা শোনায় তবু আমি আমার জায়গায় অনড়, মরে যাব তবু হোস্টেল ছাড়ব না।
আমার বাবা প্রায়ই ব্যবসার কাজে ঢাকায় আসতেন। এবার তিনি আমার বড় কাকিমা, আমার মাকে সাথে এনেছেন। অনেকদিন হয়েছে আমি বাড়ী যাই না এই জন্য আমার মা আমাকে দেখতে এবং বেড়াতেও এসেছেন।
এসে তারা মিরপুর মামার বাসায় উঠেছেন। বিকালে আমার হোস্টেল গেটে এসে ফোন দিচ্ছে আর আমাকে নামতে বলছে নীচে। আমি খুব অবাক হলাম। এগুলো আমার বাবার কান্ড। আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। যেমনটা আমি বাড়ীতে যাওয়ার সময় করে থাকি বরাবর। কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ বাড়ী গিয়ে হাজির । সবার বুকে তখন ধুকপুক করা শুরু হয়ে যায়। ফোন থাকা সত্তেও ফোন করি না সেটা নিয়ে কত বকা শুনতে হয়, এরপর তারা বলেন পথে যদি কিছু একটা দূর্ঘটনা ঘটে যায় তাহলে?
মা আমি যদি ফোন দিতাম তাহলে যতক্ষণ বাসায় না আসব ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি টেনশন করবা, এরপর তোমার ফোনের কারণে পাশের যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে বলবে- দেশে আরো বাপ-মা আছে? এদের ঢং দেখে আর বাচি না। মিনিটে মিনিটে ফোন বাজে। এই কথা শুনলে তো আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে, তখন তুমুল কান্ড ঘটিয়ে বসবো, আমার মাকে নিয়ে কথা আমি সহ্য করতে পারবো না। তার চেয়ে এটাই ভালো না, বল!!! আমি সব প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে মাকে বলি মা অনেক ক্ষুধা পেয়েছে আমাকে খেতে দাও। আমি করি এই কাহিনী, তো আমার পরিবারও ঠিক আমার জন্য ততটা।
যাইহোক আমার মা, বাবা, কাকিমা গেস্টরুমে আছেন। আমি সেখানে বসলাম। আমার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। আমার জন্য তারা অনেক খাবার এনেছেন সেগুলো সবাইকে ভাগ করে দিলাম।
এরপর বাবা মায়ের সাথে মামার বাসার দিকে রওনা দিলাম। মিরপুর ২৮নং বাসে উঠলাম। বাসে ভিড় ছিল তাই আমাদের সিট আগে পিছে ছিল, সেভাবে বসলাম। গাড়ী মিরপুর ১ নং ওভার ব্রীজের নিচে দাড়াতে আমার বাবা গাড়ী থেকে নেমে পড়েছেন। আর আমরা তিনজন একটু এগিয়ে যাওয়ার পর নেমেছি। নেমে দেখি বাবা নাই। আমরা তিন জন ঐখানে বারবার খুজি কিন্তু তাকে আর পাই না। এরপর আমি মোবাইল বের করে তাকে ফোন করি তিনি ফোন রিসিভ করেন না। কি যন্ত্রনা, এখন কি করি !!! মা তো রেগে গিয়েছে। আমি তাকে থামিয়ে বললাম তোমরা এখানে দাড়াও আমি ঐ শপিং মলের সিড়িতে দাড়িয়ে দেখি তাকে দেখতে পাই কিনা, এটা বলে আমি সিড়িতে দাড়াতেই দেখি বাব একটা ভ্যানের উপর দাড়িয়ে আমাদের কে খুজে বেড়াচ্ছে। আমি তাকে হাত ইশারা করে ডাকতেই তিনি ভ্যান চালককে থামতে বললেন। এরপর তাকে দেখি কি বিষাদময় চেহারা মনে হলো এখনই কেদে দিবে। আমাদের বকা দিবে কি উল্টা আমরাই তাকে বকে চলেছি। যাইহোক আমি সব কিছু তখন মোটামুটি চিনি কিন্তু বাবার ভয় আমাদেরকে তিনি হারিয়ে ফেলেছেন হয়তো আর খুজে পাওয়া যাবে না। অথচ তার প্যান্টের পকেটে মোবাইল আছে একটি বারের জন্য স্মরণ নাই মোবাইল বাজছে। মানুষ কতটা বিমর্ষ হলে এমন কান্ড করে!!!!!!!!!!
সেদিন তাদের সামনে কাঁদি নাই কিন্তু রাতে একটুও ঘুমাতে পারি নাই বাবা-মায়ের জন্য। পৃথিবীতে এই দুটো প্রাণী কেন এমন হলো অকাতর ভালোবাসা সব সময়ই দান করে যাচ্ছে। যাদের জন্য আমাদের এই পৃথিবীর বুকে আশ্রয়ের স্থান হয়েছে। আমার জীবনের সব ভালবাসা আমার বাবা-মা এবং পৃথিবীর সব বাবা মায়ের জন্য রইল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন